সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ ড্র করলো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে

স্পোর্টস রিপোর্টাস, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বৃহস্পতিবার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা ২৬০ রান তুলে নেওয়ার পর ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক। একমাত্র ইনিংস ব্যাটিং করে বাংলাদেশ তুলেছিল ৪৬৫ রান। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানে থামে শ্রীলঙ্কা। আশা জাগিয়ে শেষমেষ চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ ড্র করলো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে।

হ্যাটট্রিক হারের পর অবশেষে সাগরিকায় এসে পরাজয় এড়িয়ে প্রশান্তি পেয়েছে মুমিনুল হকের দল। সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃহস্পতিবার সিরিজের প্রথম টেস্টে পঞ্চম দিন ড্র হয়েছে ম্যাচটি। তাইজুল ইসলামের বাঁহাতি স্পিনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেও লঙ্কানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৬০ রান তোলার পর উভয় দল ড্র মেনে নিয়েছে। তাইজুল দুর্দান্ত বোলিং করে ৪ উইকেট তুলে নেন।

টানা হতাশাজনক পরাজয়ের পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এসে স্বস্তির ড্রয়ের পর তাই বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক জানালেন, ব্যাটে-বলে দল ভাল পারফর্মেন্সে ফেরাতে ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে এটি কাজে দেবে। শেষ পর্যন্ত ড্র হল চট্টগ্রাম টেস্টের। তাইজুল ইসলাম সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করেছিলেন। চতুর্থ দিনের শেষ বলে পেয়ে গিয়েছিলেন উইকেটও। তাতে রোমাঞ্চকর লড়াই দেখার আশার সলতেটা জ্বলে উঠেছিল। শেষ দিনে এসেও তাতে কয়েকবার ঔজ্জ্বল্য বেড়েছে।

শ্রীলঙ্কা ৩৯ রানে দুই উইকেট নিয়ে শেষ দিন শুরু করেছিল। কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে সকালটা ভালোভাবেই পার করেন অধিনায়ক দিমুথ করুণারতেœ। কিন্তু এবারও তাদের জন্য হুমকি হন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ফিফটি থেকে দুই রান দূরে থাকতে মেন্ডিসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি। তার করা গুড লেন্থের বল মেন্ডিসের অফ স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ বলে ৪৮ রান করে ফিরে যান তিনি। আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফেরাতেও বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। এবারও দলের ত্রাণকর্তা তাইজুল।

৫ মাস ও ৪ টেস্ট পর খেলতে নেমে তিনি ম্যাচের প্রথম দিনই ১৯ ওভার বোলিং করেন। প্রথম দিন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়ে আহামরি রান করতে পারেননি লঙ্কান ব্যাটাররা। তাদের মূলত ১৫ মাস পর টেস্টে ফেরা অফস্পিনার নাঈম হাসান জোড়া আঘাতে থমকে দিয়েছিলেন। প্রথম দিন ৪ উইকেটে ২৫৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় দিন আরও দুর্দান্ত ছিলেন বাংলাদেশী বোলাররা। চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম এদিন আরও ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখান। ১০৫ রানে তিনি নেন ৬ উইকেট। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস বিশে^র ১২তম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ১৯৯ রানে সাজঘরে ফেরেন।

এদিন আর মাত্র ১৩৯ রান করতেই বাকি ৬ উইকেট হারায় তারা। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনশেষে বিনা উইকেটে ৭৬ রান তোলে। তৃতীয় দিন ৩ উইকেটে ৩১৮ রান করে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকে ৭৯ রানে। ১৩৩ রাানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দেন তামিম।

চতুর্থ দিন ৪৬৫ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ১০৫ রান করা মুশফিকুর রহিম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পৌঁছেন ৫ হাজার টেস্ট রানে। ৬৮ রানে পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান তুলে লঙ্কানরা চাপে পড়ে। ডট বলের চাপে পড়ে যাওয়া ম্যাথিউস তাকে খেলতে গিয়েছিলেন ক্রিজ থেকে বেড়িয়ে এসে। কিন্তু তার ব্যাটে লেগে তাইজুলের হাতেই ক্যাচ চলে আসে। ১৫ বল খেলে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরতে হয় ম্যাথিউসকে। চার উইকেট হারিয়ে প্রথম সেশন শেষ করে শ্রীলঙ্কা।

বছরের শুরুতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ঐতিহাসিক জয়ের পর টানা ৩ টেস্টে বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কোন ম্যাচেই ব্যাটাররা ভাল কিছু করতে পারেননি। আশা জাগে ম্যাচে রোমাঞ্চকর কিছু হওয়ার। সেটা আরও একবার বাড়িয়ে দেন তাইজুল। এবার তিনি আউট করেন উইকেটে জমে যাওয়া করুণারতেœকে। মিড উইকেটে দাঁড়ানো মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক। ২ চারে ১৩৮ বলে ৫২ রান করেন তিনি। ১৪৩ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে বাংলাদেশকে ফের স্বপ্ন দেখান সাকিব আল হাসান। ৬০ বলে ৩৩ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরত পাঠান তিনি। কিন্তু এতটুকুই। এরপর আর লঙ্কানদের বিপদ বাড়তে দেননি দিনেশ চান্ডিমাল ও নিরোশান ডিকভেলা। বাকিটা সময় স্বাচ্ছন্দ্যে পাড় করেন এই দুজন।

১৩৫ বলে ৩৯ রান করে চান্ডিমাল ও ৯৬ বলে ৬১ রান করে অপরাজিত থাকেন ডিকভেলা। রোমাঞ্চের আশা জাগিয়েও নিষ্প্রাণ ড্রয়ে শেষ হয় চট্টগ্রাম টেস্ট।

মিরপুরে তাই সিরিজ জেতার জন্য মুখিয়ে থাকবে দু’দলই। সিরিজ জয়ের জন্য জিততে চাইবে মিরপুর টেস্ট। আপাতত বাংলাদেশ দল ব্যাটিং-বোলিংয়ে ভাল করে চট্টগ্রামে দারুণ কিছু করাতে বেশ সন্তুষ্ট। তবে কন্ডিশনের ভিন্নতার কথাও জানালেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘মিরপুরের উইকেট আর এই উইকেট অনেক ভিন্ন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ৩৯৭
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪৬৫

শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ৯০.১ ওভারে ২৬০/৬ (আগের দিন ৩৯/২) (করুনারতেœ ৫২, মেন্ডিস ৪৮, ম্যাথিউস ০, ধনাঞ্জয়া ৩৩, চান্দিমাল ৩৯*, ডিকভেলা ৬১*; নাঈম ২৩-৫-৭৯-০, খালেদ ৭-২-৩৭-০, সাকিব ২৫-৫-৫৮-১, তাইজুল ৩৪-৯-৮২-৪, শান্ত ১-০-২-০)

ফল ॥ ড্র
ম্যাচসেরা ॥ এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (শ্রীলঙ্কা)।
সিরিজ ॥ ২ টেস্টের সিরিজে ০-০ সমতা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com